ইউরোপ মানেই জ্ঞান-বিজ্ঞান? নাকি এক সময় ছিল অন্ধকার?
আজকের ইউরোপ এর কথা শুনলে চোখের সামনে কী ভেসে উঠে?
চমৎকার সব শহর, জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি আর বিশাল সব লাইব্রেরি তাই না!
আপনি নিশ্চয়ই ভাববেন, ইউরোপ প্রাচীনকাল থেকেই এই রকমই ছিল।
কিন্তু, সত্যটা একটু ভিন্ন।
একসময় ইউরোপ ছিল ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত!
কিন্তু তখন সেই অন্ধকারে নিমজ্জিত ইউরোপের আলোর বাতিঘর জ্বলে উঠেছিল স্পেনে।
মুসলিমরা যাকে বলে আন্দালুস।
একসময়, যখন লন্ডনের লাইব্রেরিতে বই ছিল হাতেগোনা, তখন কর্ডোভোর গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত ছিল প্রায় চার লক্ষ পাণ্ডুলিপি।
যখন গ্যালিলিওর মত বিজ্ঞানীদের ইউরোপে দগ্ধ করা হচ্ছিল “শুধুমাত্র বিজ্ঞানচর্চার জন্য”, তখন স্পেনে বলা হত “জ্ঞানার্জন ফরজ”।
কিন্তু আজ সেই ইতিহাস আর সত্যটা আমরা কয়জনই জানি?
আজ সেই স্পেনেই ইসলাম বলতে বোঝানো হয় ভয় আর আতঙ্ক!
আজকের ইউরোপ যাকে আমরা মনে করি সভ্যতার শিখর, জ্ঞান, বিজ্ঞান আর সংস্কৃতির আলয়,
তাদের সেই উজ্জ্বল ইতিহাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিল যারা, তাদের নামটাই আজ ইতিহাসের পৃষ্ঠায় ঝাপসা।
সেই মুসলিমরা, যারা স্পেনের মাটিতে পৌঁছে দিয়েছিল জ্ঞান, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি আর মানবিকতার এক অভাবনীয় যুগের সূচনা। মুসলিম স্পেনের ইতিহাস নিয়েই আমাদের আজকের লেখাটা সাজিয়েছি।
আন্দালুসের শুরু: প্রতিশোধের আগুনে লেখা ইতিহাস

কিন্তু কিভাবে? কারা ছিল তারা? আর কেমন ছিল সেই আন্দালুস? যেখানে একজন রাস্তার ঝাড়ুদারও দর্শন শাস্ত্র জানতো, আর চিকিৎসা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত—সবই চর্চা হতো মসজিদের আঙিনায়?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুজতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে হাজার বছর পিছনে!
সাল ৭১১।
স্পেন তখন এক বিভীষিকার নাম।
রাজা রডারিকের হাতে স্পেন তখন চলছিল এক ভয়ংকর অবস্থা।
চার্চের নামে চলত নারীর উপর নিপীড়ন।
করদানের নামে চলত দুর্নীতি, আর সবকিছুর উপরে ছিল অশিক্ষিত, বর্বর এক শাসনব্যবস্থা।
ঠিক এই অন্ধকার সময়েই ঘটে এক ঘটনা—যা কেবল স্পেন নয়, গোটা ইউরোপের ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি—কাউন্ট জুলিয়ান।
তিনি ছিলেন উত্তর আফ্রিকার উপকূল ঘেঁষা সিউটা নামক দুর্গ শহরের শাসক।
তাঁর অবস্থান ছিল স্পেনের রাজসভায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু সবকিছু বদলে যায়, যখন জুলিয়ানের কিশোরী মেয়ে ফ্লোরিডাকে রাজপরিবারের অভিজাত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য।
সেখানেই ঘটে সেই ভয়ংকর ঘটনা।
তৎকালীন স্পেনের খ্রিস্টান রাজা রডারিকের হাতেই জুলিয়ানের মেয়েকে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
এই পৈশাচিকতা, এই অবমাননা, শুধু একজন পিতার হৃদয়কেই ভেঙে দেয়নি,
এটা ধ্বংস করেছিল তার বিশ্বাস—সেই রাষ্ট্রব্যবস্থার উপর, যাকে সে এতদিন ধরে রক্ষা করে এসেছিল।
জুলিয়ান ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে যেতে থাকে—ক্ষোভে, ঘৃণায়, প্রতিশোধের আগুনে।
তিনি বুঝে যান, এই গথ রাজত্বের পতনই কেবল পারে স্পেনের জনগণকে মুক্তি দিতে।
জুলিয়ান সিদ্ধান্ত নেয় সে সাহায্যের হাত বাড়াবে তাদেরকে, যারা স্পেনের মুক্তির জন্য লড়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। সে তার মেয়ের প্রতি অবিচার আর স্পেনের এই অরাজকতার বর্ননা দিয়ে চিঠি লেখে মরক্কোর মুসলিম শাসক মুসা বিন নুসাইরের কাছে।
মুসা বিন নুসাইর তখন ছিলেন মরক্কোতে আফ্রিকার মুসলিম শাসক।
তিনি কাউন্টের অনুরোধ মেনে স্পেনে পাঠালেন তার সেনাপতি তারেক বিন যিয়াদকে। তারেক বিন যিয়াদের সাথী হিসেবে ছিল সাত হাজার সাহসী সৈন্য।
তারেক বিন যিয়াদ যখন স্পেনের উপকূলে পৌঁছালেন, তখন তিনি নিজেদের জাহাজগুলো পুড়িয়ে দিলেন, যেন প্রত্যাবর্তনের আর কোন পথ না থাকে।
আপনি কল্পনা করুন সেই মুহূর্তটার কথা যখন সৈন্যদের সামনে সমুদ্র, পিছনে শত্রু, একমাত্র সামনে রয়েছে বিজয় অথবা মৃত্যু।
সেই সময়ের তারেক বিন যিয়াদের তার সেনাদের উদ্দেশ্যে সেই বিখ্যাত ভাষণ আজও হৃদয় স্পর্শ করে—
“তোমাদের সামনে শত্রু, আর পিছনে সমুদ্র।
আমরা শুধু দেশ জয় করতে আসিনি, মানবতা প্রতিষ্ঠা করতে এসেছি”
রডেরিকের বাহিনী ছিল বিশাল—প্রায় ত্রিশ হাজার সৈন্য ছিল তার।
অন্যদিকে তারেকের হাতে ছিল মাত্র সাত হাজার সৈন্য।
আপনি হয়তো ভাবছেন, কিভাবে এত কম সৈন্য দিয়ে এত বড় বাহিনীকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছিল?
জবাব হলো — মুসলিম বাহিনির সেই ইমানি শক্তি।
তারেক বিন যিয়াদ ছিলেন একজন অপরিসীম নেতৃত্বের অধিকারী, যার নেতৃত্ব সৈন্যদের মনোবল বাড়িয়েদিয়েছিল কয়েকগুন।
সৈন্যরা শুধু জমি জন্য নয়,তারা লড়ছিলো নতুন এক সভ্যতা গড়ার জন্য।
৭১২ সালে রডেরিক পরাজিত হন, মুসলিম শক্তি আন্দালুসে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই জয় শুধু সামরিক জয় নয়, ছিল এক নতুন সংস্কৃতি ও জ্ঞানের সূচনা।
মুসলিম আন্দালুসের স্বর্ণযুগ: শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সভ্যতার আলো

৭১২ থেকে ১৪৯২, প্রায় ৭৮১ বছর ধরে মুসলিমদের স্পেন বা আন্দালুস ছিল ইউরোপের জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র।
আপনি কি জানেন?
স্পেনে তখন ছিল ৭০০ এরও বেশি মসজিদ।
৮০০ টির বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
৭০ টির কাছাকাছি বিশাল গ্রন্থাগার।
কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
প্রায় ৬০,০০০ প্রাসাদ, ৯০০ এর বেশি গোসলখানা ছিল সেখানে।
রাস্তা, উন্নত সেচ ব্যবস্থা, হাসপাতাল—সবকিছুতেই ছিল আধুনিকতার নিদর্শন।
আপনি হয়তো শুনেছেন ইবনে রুশদের নাম।
তিনি ছিলেন কর্ডোভারই এক মহান দার্শনিক, চিকিৎসক ও বিচারপতি।
দুনিয়ার ইতিহাসে যিনি প্রথমবার অ্যারিস্টটলের দর্শনকে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেন।
তাঁর লেখাই পরবর্তীতে ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দর্শনের পাঠ্য হয়।
ইবনে তোফায়েল ছিলেন এক বিস্ময়কর দার্শনিক ও চিকিৎসাবিদ, যিনি লিখেছিলেন—
“Hayy ibn Yaqzan” — ইতিহাসের প্রথম দার্শনিক উপন্যাস,
যেখানে তিনি মানুষ, মন ও ঈশ্বর নিয়ে এমন গভীর চিন্তা প্রকাশ করেন—যা পাশ্চাত্যের সাহিত্যকেও নাড়া দেয়।
আর আপনি কি জানেন—আকাশে ওড়ার স্বপ্ন যিনি প্রথম দেখেছিলেন,
তিনি ছিলেন স্পেনেরই আব্বাস ইবনে ফিরনাস?
নামের মতোই উড়ন্ত স্বপ্ন দেখা এই মানুষটি ৯ম শতকে পাখার মতো ডানা বানিয়ে আকাশে ওড়ার চেষ্টা করেছিলেন।
তিনি শুধু সাহস দেখাননি, ভবিষ্যতের বিমান বিজ্ঞানের বীজ বপন করেছিলেন তিনি।
এখানেই শেষ নয়!
আপনি জানেন কি, এই মাটিতেই জন্মেছেন এমন একজন মানুষ—
যিনি শুধু ইসলামি দুনিয়ার নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির আধ্যাত্মিক ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম?
তিনি হলেন—শাইখ মুহিউদ্দিন ইবনে আল-আরাবি।
১২ শতকের এই সুফি সাধককে বলা হয় “আল-শাইখুল আকবর” বা সর্বশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক গুরু।
আন্দালুসের কর্ডোভাতে তাঁর জন্ম, আর সেখান থেকেই তিনি ছড়িয়ে দেন এক বিশাল আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি,
যেখানে মানুষ, সৃষ্টি, প্রেম, আর আল্লাহর রহস্য এক গভীর ঐক্যে বাঁধা।
তিনি বলেন—
“হৃদয় এমন এক আয়না, যেখানে ঈশ্বর প্রতিফলিত হন—যদি তা ভালোবাসা দিয়ে পরিষ্কার করা যায়।”
তাঁর দর্শন আজও পড়ানো হয় পশ্চিমের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।
তাঁর চিন্তা প্রভাব রেখেছে রুমি থেকে হেনরি করবিন, এমনকি আধুনিক দর্শনের ক্ষেত্রেও।
অনেকেই ভাবেন বিজ্ঞান আর ধর্ম কি একসাথে চলতে পারে?
মুসলিম স্পেনে সেটা ছিল বাস্তব।
কুরআনের নির্দেশ ছিল স্পষ্ট—‘ভাবো, জানো, অনুধাবন করো।’
সেই শিক্ষায় জন্ম নিয়েছিল কোর্ডোভা, গ্রানাডা, সেভিলার মতো বিশ্ববিদ্যালয় শহর।
মুসলিমরা ইউরোপে পৌঁছে দিয়েছিল—
অংকশাস্ত্র,
জ্যোতির্বিজ্ঞান,
চিকিৎসা ও শল্যবিদ্যা,
ফার্মাসি,
আর কাগজের ব্যবহার।
এই শিক্ষাই একদিন নিউটন, কেপলার, ডেকার্টের মতো মহা বিজ্ঞানীদের পথপ্রদর্শক হয়েছিল।
মুসলিম স্পেনের পতন: অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস
কিন্তু ইতিহাসের সবচেয়ে বেদনাদায়ক সত্যটা হলো—
আন্দালুসে মুসলমানদের পতন বাইরের শত্রুর হাতে হয়নি।
তা হয়েছিল মুসলমানদের ভেতরের বিভাজন, অবিশ্বাস, আর ক্ষমতার লালসায়।
স্পেনের মুসলিম শক্তির শেষ আশ্রয়স্থল ছিল গ্রানাডা। এমন একটা শহর, যা একসময় ছিল শিল্প, জ্ঞান আর সৌন্দর্যের প্রতীক।
কিন্তু সেই শহরের ভেতরেই শুরু হয় এক ভয়ংকর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।
বাদশাহ আল-জাগাল, যিনি তখনকার শাসক, তিনি ছিলেন বয়সে প্রবীণ আর কিছুটা দুর্বল।
আর তাঁর ভাতিজা আবু আব্দুল্লাহ, ছিলেন উচ্চাভিলাষী এক তরুন।
ভেতরে ভেতরে এই দুই শাসকের মধ্যে শুরু হয় সংঘাত,
দুই পক্ষে ভাগ হয়ে যায় গোটা মুসলিম সমাজ।
একটা সময় আবু আব্দুল্লাহ নিজের চাচাকে সরিয়ে দেয় সিংহাসন থেকে।
আর এই ক্ষমতার লড়াইয়ের মাঝেই স্পেনের খ্রিস্টান রাজদম্পতি—ফার্দিনান্দ ও ইসাবেলা, শুরু করেন তাঁদের পরিকল্পনা।
তাঁরা জানতেন, মুসলমানদের অস্ত্র দিয়ে হারানো কঠিন,
কিন্তু ভাঙা হৃদয়, বিভক্ত সমাজ এগুলো তুলনামূলক সহজ লক্ষ্য।
খ্রিস্টান বাহিনী যখন গ্রানাডার দিকে ধেয়ে আসে,
তখন শহরের দেয়ালের বাইরে ছিল শত্রু, আর দেয়ালের ভেতরে চলছিল বিশ্বাসঘাতকতা।
আরও করুণ ব্যাপার হলো—
আবু আব্দুল্লাহ সেই সময় গোপনে ফার্দিনান্দের সঙ্গে আলোচনায় বসেন,
নিজের অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টায়, তিনি নিজের শহর, নিজের জাতিকে সঁপে দেন শত্রুর হাতে।
শেষ পর্যন্ত,
১৪৯২ সালের ২ জানুয়ারি,
আবু আব্দুল্লাহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন।
তিনি নিজের হাতে তুলে দেন গ্রানাডার চাবি।
আর সেদিন, মিনারের চূড়ায় উঠিয়ে দেওয়া হয় খ্রিস্টানদের ক্রুশ।
নেমে আসে আন্দালুসের শেষ সূর্যাস্ত।
কথিত আছে,
আবু আব্দুল্লাহ শহর ছাড়ার সময় এক পাহাড়চূড়ায় দাঁড়িয়ে শেষবারের মতো ফিরে তাকিয়েছিলেন নিজের শহরের দিকে।
তার চোখে জল এসে গিয়েছিল।
তখন তাঁর মা, রানি আয়শা আবু আবদুল্লাহকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন সেই বিখ্যাত কথা—
“তুমি একজন পুরুষের মতো লড়তে পারোনি, এখন একজন নারীর মতো কান্না কোরো না!”
আন্দালুসে মুসলিমদের ৭৮১ বছরের ইতিহাস, সভ্যতা, গৌরব—সব যেন মুছে গেল এক বিকেলেই।
Spanish Inquisition: যখন পুড়েছিল বই নয়, পুরো সভ্যতা
গ্রানাডা আত্মসমর্পণের পর, ফার্দিনান্দ ও ইসাবেলা মুসলিমদের প্রতি ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
কিন্তু প্রতিশ্রুতি ছিল কাগজে—বাস্তবতা ছিল ভয়াবহ নিষ্ঠুর।
আজান বন্ধ করে দেওয়া হলো।
আর ঘোষণা এল—
“ইসলাম ছেড়ে খ্রিস্টান হও, নয়তো দেশ ছাড়ো। আর দেশ ছাড়তেও পারবে না—যদি কর না দাও!”
মুসলিমরা দলে দলে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হয়।
তাদের নাম রাখা হয় “মোরিসকো”—মানে খ্রিস্টান রূপে রূপান্তরিত মুসলমান।
কিন্তু তারা খ্রিস্টান হয়েও খ্রিস্টান সমাজে বিশ্বাসযোগ্য ছিল না।
তাদের ঘরে গুপ্তচর বসানো হতো, নামাজ পড়ছে কিনা, কুরআন লুকিয়ে রাখছে কিনা—তা পর্যবেক্ষণ করা হতো।
এরপর আসে সেই ভয়ংকর সময়—Spanish Inquisition।
এই এক ধর্মীয় নির্যাতনযন্ত্র, যার হাতে মৃত্যুবরণ করেছে হাজার হাজার নিরপরাধ মুসলমান ও ইহুদি।
৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ মুসলমানকে দেশছাড়া করা হয়।
অনেকে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারান।
যাদের ধর্মান্তরিত করেও সন্দেহ দূর হয়নি—তাদেরকে জ্যান্ত আগুনে পোড়ানো হয়।
এবং সবচেয়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্য—
১৪৯৯ সালের ১ এপ্রিল, গ্রানাডার কেন্দ্রীয় মসজিদে আগুন দেওয়া হয়।
শুধু বই নয়, মানুষও পুড়ছিল।
ঐতিহাসিকরা এইদিনটিকে লিখেছেন এভাবে :
“সে দিন শুধু ধর্ম নয়, পুড়েছিল সভ্যতা… পুড়েছিল ভাষা, পুড়েছিল আলোকিত চিন্তা।”
নারী, শিশু, বৃদ্ধ—কেও বাদ ছিল না।
এটাই ছিল মুসলিম স্পেনের শেষ অধ্যায়—যেখানে একসময় আলো ছিল, সেই আলো নিভে গেল ছাইয়ের স্তূপে।

আন্দালুসের পতনের শিক্ষা কি আমরা নিয়েছি?
স্পেনে মুসলমানদের আগমন ছিল জ্ঞানের আলো নিয়ে।
আর প্রস্থান—একটা রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক পতনের ফল।
আন্দালুস ছিল এমন এক ভূখণ্ড, যেখানে মুসলিম সভ্যতা ইউরোপের অন্ধকারে আলো জ্বালিয়েছিল।
কিন্তু সেই আলো তারা নিজেরাই নিভিয়ে দিয়েছিল—অভ্যন্তরীণ বিভাজন, ক্ষমতার লড়াই, আর ঐক্যের অভাবে।
একসময় বলা হতো—
“যদি জান্নাত পৃথিবীতে কোথাও থাকে, তবে তা আন্দালুস।”
আজ সেখানেই ইসলাম মানে আতঙ্ক।
প্রশ্ন হলো—
আমরা কি এই ইতিহাস থেকে শিখেছি কিছু?
না কি আজও নিজেদের ভেতরেই ধ্বংসের বীজ বপন করছি?
Read More : বাংলা সালতানাত : যখন বাংলা ছিল স্বাধীন ও স্বশাসিত