বাংলাদেশের জন্য J-10C যুদ্ধবিমান কেন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়?

দক্ষিণ এশিয়ার ক্রমবর্ধমান সামরিক উত্তেজনা এবং প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের জন্য J-10C যুদ্ধবিমান এখন শুধুই একটি সংগ্রহের বিষয় বা কেবল একটি আধুনিকায়ন প্রকল্প নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত প্রয়োজন হিসেবেই ধরা দিয়েছে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী (BAF) ইতোমধ্যেই ১৬টি J-10C মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্র্যাফট (MRCA) কেনার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে, যার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ডঃ ইউনূস এর সাম্প্রতিক চীন সফর ও বিমানবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের মন্তব্যে।

বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সীমাবদ্ধতা কী?

বাংলাদেশের বর্তমানের বিমান বহরের বড় একটি অংশ মূলত নির্ভর করছে পুরনো J-7MB এবং J-7BG সিরিজের উপর, যেগুলো প্রযুক্তিগতভাবে আধুনিক যুদ্ধবিমানগুলোর তুলনায় অনেকটাই পশ্চাৎপদ। ৩৬টি J-7BG/BGI কমব্যাটে সক্ষম হলেও, এদের অ্যাভিওনিক্স ও অস্ত্র ব্যবস্থাপনা ৪.৫ জেনারেশনের যুদ্ধে একদমই কার্যকর নয়। এছাড়া শুধুমাত্র ১১টি FT-7 ট্রেইনার বহরে রয়েছে যেগুলো মূলত গ্রাউন্ড অ্যাটাক ও প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই বাংলাদেশের বিমানবহরের এই নাজুক অবস্থায় চীনের তৈরিকৃত J-10C হয়ে উঠছে অত্যন্ত কার্যকর একটি সমাধান। যা কিনা শুধু MRCA নয়, বরং একটি টেকসই প্রতিরক্ষা অবকাঠামো গঠনের প্রথম ধাপ হতে পারে বাংলাদেশের জন্য।

J-10C যুদ্ধবিমানের বৈশিষ্ট্য: কেন এটি গেম চেঞ্জার?

৪.৫ জেনারেশনের ক্ষমতা

J-10C হল একটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর চীনা যুদ্ধবিমান, যা AESA রাডার, অত্যাধুনিক অ্যাভিওনিক্স এবং স্টিলথ প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ডিজাইনসহ সজ্জিত।

BVR যুদ্ধ সক্ষমতা (Beyond Visual Range)

এটিতে PL-15E মিসাইল ব্যবহার করতে সক্ষম, যার রেঞ্জ ১৪৫ কিমি—ভারতের Astra MK-1 এর ১১০ কিমি রেঞ্জের তুলনায় অনেক বেশি। PL-15E এর সঠিক ব্যবহার করলে বাংলাদেশের বিমানবাহিনী আকাশেই প্রতিপক্ষকে থামিয়ে দিতে পারবে।

AWACS সমর্থন

যদি চীনা KJ-500 বা অন্য কোনো AWACS সিস্টেম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়, তবে J-10C স্কোয়াড্রনকে ৩০০+ কিমি দূরে থেকেই লক্ষ্য নির্ধারণ ও আক্রমণের অনুমোদন দেওয়া যাবে। এটি পুরো দক্ষিণ এশিয়ার আকাশকে আরও নিরাপদ করতে সাহায্য করবে।

ভারতের রাফালের বিরুদ্ধে পরীক্ষিত

পাকিস্তান ইতিমধ্যে কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে এই J-10C যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতের ফ্রান্সে তৈরিকৃত অত্যাধুনিক দুইটি Rafale যুদ্ধবিমান এবং আরও তিনটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে বলে দাবি করেছে, যদিও ভারতীয় মিডিয়া এই ব্যাপারটি এড়িয়ে যাওয়ারই চেষ্টা করেছে। তবে স্বয়ং রাফালের নির্মাতা দেশ ফ্রান্স ও মার্কিন কিছু সূত্র এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তাই এতে J-10C এর combat credibility সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আধুনিক সামরিক কৌশল

বর্তমান বিশ্বে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা এবং ভারত-পাকিস্তান সংঘাত প্রমাণ করেছে মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান, BVR মিসাইল এবং ড্রোনই আধুনিক যুদ্ধের ভিত্তি। শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশকে যদি আঞ্চলিক নিরাপত্তায় টিকিয়ে রাখতে হয়, তবে আধুনিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সংগ্রহ করা ছাড়া উপায় নেই। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জামাদির জন্য চীন এবং তুরস্কের দিকেই বেশি ঝুঁকছে। চীন থেকে J-10C সংগ্রহ ছাড়াও তুরস্ক থেকে Bayraktar TB2 ড্রোন, আকিনচি ড্রোন ও হালকা ট্যাংক সংগ্রহের কথা অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশের সামরিক খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার টপিক।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: বাংলাদেশে কতটি J-10C যুদ্ধবিমান প্রয়োজন?

প্রাথমিকভাবে ১৬টি J-10C কেনার প্রস্তাব থাকলেও সামগ্রিক পরিকল্পনায় এটি F-7 বিমানের পূর্ণাঙ্গ রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। বিশ্লেষকদের মতে, অন্তত ৩ স্কোয়াড্রন (৪৮টি জেট) দরকার হবে বিমানবাহিনীর পূর্ণ সক্ষমতা অর্জনে। এর সঙ্গে যদি ভবিষ্যতে আরও ১ স্কোয়াড্রন সংযুক্ত করা হয়, তবে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সম্ভাবনাময় এয়ার ফোর্স হিসেবে গড়ে উঠতে সক্ষম হবে।

Bangladesh J-10C Fighter Jet Image for Defense Analysis

বাংলাদেশের জন্য J-10C এর সামরিক ও কূটনৈতিক গুরুত্ব

বাংলাদেশের জন্য J-10C যুদ্ধবিমান নিজেদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং দক্ষিণ এশীয় কূটনৈতিক নিরাপত্তা ভারসাম্য বজায় রাখতে একটি বিশেষ অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে এটি ভারতের Su-30MKI ও Mig-29 এর চেয়েও আধুনিক এবং কম খরচে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিকল্প। সঠিক পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে J-10C হতে পারে বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষার প্রধান স্তম্ভ।

FAQs: বাংলাদেশের J-10C সংগ্রহ নিয়ে সাধারণ জিজ্ঞাসা

প্রশ্ন ১: J-10C কি ভারতের Rafale বা Su-30MKI এর সমকক্ষ?
উত্তর: হ্যাঁ, বিশেষ করে BVR কমব্যাটে PL-15E + AWACS কম্বো ভারতের অধিকাংশ জেটকে কার্যকরভাবে পরাস্ত করতে পারে।

প্রশ্ন ২: কয়টি J-10C সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে?
উত্তর: প্রাথমিকভাবে ১৬টি, তবে ৩ স্কোয়াড্রন (৪৮টি) পর্যন্ত সম্প্রসারণের সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রশ্ন ৩: এটি কবে আসবে?
উত্তর: সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলে ১–২ বছরের মধ্যে প্রথম স্কোয়াড্রনের ডেলিভারি শুরু হতে পারে।

Read More : Microsoft AI প্রযুক্তি নাকি যুদ্ধের হাতিহার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *